![]() |
কাঁচা হলুদ,herbalplant-news.blogspot.com |
খাদ্য বিশেষে অনেকের দেহ চাকা চাকা হয়ে ফুলে ওঠে, চুলকায়, লাল হয়ে যায় তাকে চট্টগ্রামে পিঁড়ি বাত বলে। এক্ষেত্রে নিমপাতার গুঁড়ো এক ভাগ, কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সেটা দুই ভাগ ও শুকনো আমলকীর গুঁড়ো তিনভাগ এক সাথে মিশিয়ে এক গ্রাম হারে সেটা সকালে খালি পেটে বেশ কিছু দিন খেতে হয়।
হামজ্বর :
ক) এ জ্বরে কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সাথে করলা পাতার রস ও অল্প মধু মিশিয়ে খাওয়ালে তা সারে।
খ) হলুদের শিকড় রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চা চামচ মধু ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে হাম সারে।পুরনো ঘুসঘুসে জ্বর, কোষ্ঠবদ্ধতা,
খ) হলুদের শিকড় রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে এক চা চামচ মধু ও করলা পাতার রস মিশিয়ে খেলে হাম সারে।পুরনো ঘুসঘুসে জ্বর, কোষ্ঠবদ্ধতা,
পেটের পীড়া
:
পেটের সংক্রমণ দমনে হলুদ খুবই কার্যকর। মাখন বা দুধের সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে উপকার মেলে।
কৃমি :
কাঁচা হলুদের রস ১৫-২০ ফোঁটা (বয়সানুপাতে) সামান্য লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হয়। কৃমি দমনে কার্যকর ওষুধ, তাই একে কৃমিঘ বা কৃমিনাশকারীও বলে।
লিভারের দোষ :
পাণ্ডু রোগে (জন্ডিস) গায়ের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে আসছে বুঝতে পারলে হলুদের রস ৫ থেকে ১০ ফোঁটা থেকে শুরু করে বয়সানুপাতে ১ চা চামচ পর্যন্ত একটু চিনি বা মধু মিশিয়ে খাওয়া ব্যবস্থা বহু আগে থেকে চলে আসছে। আবার একটু হলুদ গুঁড়া তার দ্বিগুণ পরিমাণ দইয়ে মিশিয়ে খেলে পিলে ও যকৃতের দোষ এবং জন্ডিস সারে। মধুসহ হলুদ খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
তোতলামি :
ছোটবেলায় যাদের কথা আটকে যায় বা স্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি কথা বলার অভ্যাস, সে ক্ষেত্রে হলুদকে গুঁড়ো করে (কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে) তা দুই-তিন গ্রাম পরিমাণে এক চা চামচ ঘিয়ে একটু ভেজে সেটাকে দুই-তিনবার চেটে চেটে খাওয়াতে হয়। এতে তোতলামি কমে যায়।
শ্লিপদ (ফাইলেরিয়া)
:
এ অবস্থায় একচা চামচ হলুদের রস অল্প গুড় ও এক চা-চামচ গরুর পেশাব খাওয়াতে বিধান কবিরাজ চক্রপানি দত্তের। এটি আমবাতেও ব্যবহার করা হয়।
পিপাসা বা তৃষ্ণা :
পাঁচ-সাত গ্রাম কাঁচা হলুদ থেঁতলে নিয়ে দেড় কাপ আন্দাজ পানিতে ৫-১০ মিনিট সিদ্ধ করে ছেঁকে নিয়ে ওই পানি চিনিসহ অল্প অল্প করে পান করলে শ্লেষ্মাজনিত পিপাসা চলে যায়।
হাঁপানি :
হলুদ গুঁড়ো, আখের গুড় ও খাঁটি সরিষার তেল এক সাথে মিশিয়ে চাটলে হাঁপানি একটু উপশম হয়। এ ছাড়া এক চা-চামচ হলুদের গুঁড়ো এক গ্লাস দুধে মিশিয়ে দিনে দুই-তিনবার খেলে ভালো উপকার মেলে। এটি খালি পেটে খাওয়া ভালো।
পেটের বায়ু ও পুরাতন ডায়রিয়া
:
অন্ত্রের রোগে যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন টাটকা হলুদ বেটে যে রস পাওয়া যাবে তা বা সামান্য পরিমাণ হলুদ গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খাবেন। রোগটি এতে সেরে যায় একেবারেই। পেটে বাতাস হলে ও পুরনো ডায়রিয়ায় হলুদের গুঁড়ো বা রস পানিসহ খেলে খুবই উপকার হয়।
কফ, সর্দি ও ঠাণ্ডা লাগা
:
দুধে হলুদকে সিদ্ধ করে বেটে চিনি মিশিয়ে খেলে সর্দি সারে। পুরনো কফ রোগ, গলা ফোলা ও গলা জ্বালায় আধা চা-চামচ হলুদের গুঁড়ো ৩০ মি.লি. গরম দুধে মিশিয়ে খেলে খুবই উপকার হয়। এতে বড় চামচে দুধ ঢেলে তাতে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে অল্প আঁচে উৎরিয়ে নিতে হয়।
কাশি :
খুব বেশি কাশির ঝোঁক হলে এক কাপ ঈষৎ উষ্ণ পানিতে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে ধীরে ধীরে পান করলে কাশির উপশম হয়।
সর্দিজ্বর :
গরম দুধে হলুদ গুঁড়ো ও গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে খেলে সর্দিজ্বর কমে।
হজমে দুর্বলতা,
পুরনো কাশি
:
হলুদ খেলে হজমে কোন সমস্যা থাকে না। এমনকি পুরানো কাশিও সেরে যায়। সুতরাং কাচা হলুদের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক।
হলুদ খাওয়ার কিছু উপকার
মধু মিশিয়ে হলুদের গুঁড়ো খেলে এসব রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
১। গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে কাঁচা হলুদ। গ্যাস-নিরোধক উপাদান থাকায় নিয়মতি কাঁচা হলুদ খেলে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দেবে না।
২। মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে কাঁচা হলুদ । নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে অ্যালঝাইমার্স,
ডিমেনশিয়া সহ মস্তিষ্কের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে।
৩। এমনকি ক্যানসার নিরোধক হিসেবেও কাজ করে কাঁচা হলুদ। খালি পেটে রোজ সকালে এক টুকরো কাঁচা হলুদ খেলে ক্যানসার আক্রমনের সম্ভাবনা কমে যায়। আবার হলুদ যখন ফুলকপির সাথে মিলিত হয় তখন এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং বিদ্যমান প্রস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়।
৪। কাঁচা হলুদ হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে । ফলে নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে হার্টের সমস্যা আপনার কাছে ঘেঁসতে পারবে না।
৫। অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে আর্থারাইটিসের সমস্যা অনেকাংশেই ভালো হয়ে যায়।
৬। বয়সজনিত নানা সমস্যাকে দূরে রাখতে সকালবেলা খালি পেটে নিয়মিত এক টুকরো কাঁচা হলুদ খান ।
৭। চা হলুদ একটি প্রাকৃতিক এন্টিসেপ্টিক। তাই কাঁটা এবং পোড়া জায়গায় হলুদ বাটা লাগালে অনেক উপকার পাওয়া যায় ও তাড়াতাড়ি ব্যথা এবং দাগের উপশম ঘটে।
৮। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধকারী ও অন্ত্রের ক্যান্সার নিরাময়কারী।
৯। মেলানোমা প্রতিরোধ এবং আত্মহত্যা করতে মেলানোমা কোষ বিদ্যমান হতে পারে।
১০। শিশুদের লিউকেমিয়া ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
১১। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্য বাত এবং ফোলানো বাত এর জন্য একটি প্রাকৃতিক চিকিত্সা।
১২। হলুদ কেমো ড্রাগ এর প্রভাব এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সাহায্য করে।
১৩। গবেষণা দেখা গেছে, হলুদ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার উপশমে চমৎকার কাজ করে থাকে।
১৪। টিউমার হওয়া বন্ধ ও নতুন রক্ত উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হলুদের অনেক গুন।
১৫। হলুদের গাঠ পিষে, ঘিয়ে ভেজে চিনি মিশিয়ে কিছু দিন খেলে (নিয়মিত) ডায়াবেটিস সারে। প্রমেহও সারে।
১৬। এটি চর্বি বিপাকে সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।
১৭। দীর্ঘ বিষণ্নতা জন্য একটি চিকিত্সা হিসাবে চীনা দেশে হলুদেরর ঔষধ ব্যবহার করা হয়।
১৮। হলুদের মানসিক অবসাদ রোধ করতে ব্যবহৃত অ্যান্টি ডিপ্রেস্যান্টের কাজও করে । এ ছাড়া, এই উপাদানে রয়েছে অ্যাস্পিরিনের গুণ। এর প্রয়োগে ভ্যাস্কুলার থ্রম্বোসিস আক্রান্ত রোগীর রক্তের ঘনত্বের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
১৯। হলুদের মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লোহা প্রভৃতি নানা পদার্থ রয়েছে। তাই হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। যেমন বাচ্চাদের লিউকমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় নিয়মিত কাঁচা হলুদের রস সেবন। প্রতিদিন দুধ বা পানির সাথে হলুদের গুঁড়ো বা রস মিশিয়ে খাওয়া অভ্যাস করলে অনেকটাই সুস্থ থাকা সম্ভব।
২০। হলুদের অন্য এক উপাদান ‘পলিফেনল’ চোখের অসুখ ‘ক্রনিক অ্যান্টিরিয়ার ইউভেইটিস’ সারাতে কর্টিকোস্টেরয়ডের কাজ করে। উল্লেখ্য, এই রোগের প্রকোপে চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও প্রদাহ দেখা যায়।
২১। মুখে জ্বালা-পোড়া করলে গরম পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
২২। শরীরের কোনো অংশ পুড়ে গেলে পানির মধ্যে হলুদের পাউডার মিশিয়ে লাগাতে পারেন।
২৩। সূর্যের তাপে গা জ্বলে গেলে হলুদের পাউডারের মধ্যে বাদামের চূর্ণ এবং দই মিশিয়ে লাগান।
২৪। আয়ুর্বেদিক মতে, হলুদ রক্ত শুদ্ধ করে।
২৫। নাকের ক্ষতঃ নাকের ভেতর ক্ষত হলে হলুদ গুঁড়ো মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
২৬। জোঁকে ধরাঃ জোঁকের মুখে হলুদ বাটা বা গুঁড়ো দিলে জোঁকও ছাড়ে, সেই সাথে রক্ত পড়াও বন্ধ হয়।
কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে না পারলে তাজা ফলের রস, স্যুপ- এ সবের মধ্যেও এক চামচ কাঁচা হলুদের রশ মিশিয়ে নিতে পারেন আপনি।
কাঁচা হলুদ চিবিয়ে খেতে না পারলে তাজা ফলের রস, স্যুপ- এ সবের মধ্যেও এক চামচ কাঁচা হলুদের রশ মিশিয়ে নিতে পারেন আপনি।
No comments:
Post a Comment